প্রকাশিত: ১৩/১১/২০১৪ ১:০৭ অপরাহ্ণ
মানবপাচারের অভিযোগে ৬ বিজিবি সদস্য ক্লোজড

bgb_1
ইমাম খাইর::
মানবপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে টেকনাফ হাবিরছরা চেকপোষ্টে কর্মরত বিজিবি সদস্য হাবীবুল্লাসহ ৬ জনকে ক্লোজড করা হয়েছে। আদালতে ৪ ভিকটিমের জবানবন্দির প্রেক্ষিতে মামলা তদন্তের স্বার্থে তাদের ব্যাপারে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কক্সবাজার সদর দপ্তরের সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল খোন্দকার ফরিদ হাসান। ১২ নভেম্বর বুধবার তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

৮ নভেম্বর কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট এক অফিস আদেশে সেক্টর কমান্ডার, কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবং ৪২ বিজিবি’র অধিনায়কের কাছে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেন। একই সাথে ওই আদেশে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিধি মোতাবেক তদন্ত করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বেড়াতে আনার কথা বলে ৫ নভেম্বর নরসিংদি জেলার নুরালাপুর এলাকার মো: ইদ্রিস আলীর পুত্র মো: শামীম (১৮), মো: আলীমের পুত্র মো: ইমন ভুইয়া মাহফুজ (১৮), মৃত মাহতাব মিয়ার পুত্র মো: মেহেদী হাসান (১৯) ও এমপাঁচগাঁও বলবদলী এলাকার জয়নাল আবেদীনের পুত্র মো: আব্দুল্লাহ (২০)কে দালালচক্র কক্সবাজারে নিয়ে আসে। এতে তাদের এলাকার রুহ ও ছলু নামের দুই দালাল জড়িত বলে ভিকটিমরা জানিয়েছে। তারাই কক্সবাজারের অরেক দালালের হাতে তুলে দেয়। পরে কক্সবাজার থেকে টেনাফ সড়ক হয়ে তাদের পাচারের উদ্দেশ্যে নেয়ার পথে টেকনাফ হাবিরছরা চেকপোষ্টে ভিকটিমদের নামানো হয়। সেখান থেকে চেকপোষ্টের ভেতরে একটি কক্ষে নিয়ে প্রায় ১ ঘন্টা তাদেরকে বসিয়ে রাখা হয়। পরে ফোন করে এনে সেখানে দায়িত্বরত হাবীবুল্লাসহ ৬ বিজিবি সদস্য মানবপাচারকারী দালাল তৈয়বের হাতে বিক্রি করে দেয়। পরে তাদেরকে টেকনাফস্থ পশ্চিম মুন্ডার ডেইল গ্রামের মোঃ সৈয়দ আলমের বাড়ী থেকে উদ্ধার করে থানায় সোপর্দ করে বিজিবি।

এ ঘটনায় ৭ নভেম্বর টেকনাফ থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইন ২০১২ এর ৭/৮ ধারা মতে বাড়ীর মালিক সৈয়দ আলমসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করা হয়েছে। ওই দিনই তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে কক্সবাজার কোর্টে আনা হয়। আদালত ভিকটিমদের দীর্ঘ জবানবন্দি রেকর্ড করেন। সেখানে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে তারা। জবানবন্দিতে তাদের পাচারের নেপথ্য কাহিনী নির্দিধায় বর্ণনা দেন তারা।

এদিকে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানকালে ভিকটিম ছিনতাই করতে এসে ৩ দালাল আটক করেছে পুলিশ। ৮ নভেম্বর শনিবার রাতে কক্সবাজার জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গন থেকে তাদের আটক করে। তারা হলো-টেকনাফের সাবরাং আলীর ডেইল এলাকার আনোয়ারের পুত্র জাবেদ (৩২), সুলতান আহমদের পুত্র আকিল (৩০) ও নুর আহমদের পুত্র ইসমাঈল। আজ বৃহস্পতিবার তাদেরকে ৭ দিনের রিমান্ড শুনানীর জন্য আদালতে হাজির করা হচ্ছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টেকনাফ মডেল থানার এসআই আব্দুর রহিম জানিয়েছেন।

ভিকটিম ইমন ভুইয়া মাহফুজ জানায়, কক্সবাজারের একজন দালাল আমাদেরকে একটি বাসে তুলে। এরপর কক্সবাজার টেকনাফ সড়কে অবস্থিত একটি বিজিবি চেকপোষ্টে আমাদের আটক করে রাখা হয়। সেখানে প্রায় ১ ঘন্টা আটকিয় রেখে অনেকে মানসিক টর্চাল করা হয় আমাদেরকে। ওই চেকপোষ্টের পাশে একটি কবরস্থান আছে। এ সময় হাবিবুল্লাহ নামে বিজিবি’র এক লোক ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে তৈয়ব নামের এক দালালের কাছে আমাদেরকে বিক্রি করে দেয়। ওই দালাল আমাদেরকে মোটর সাইকেলে করে একটি ঘরে নিয়ে আটকিয়ে রাখে। সেখানে আমাদের প্রচুর মারধর করা হয়। খাবার পানি পর্যন্ত আমাদের দেয়া হয়নি।’ একই তথ্য দেয় ভিকটিম শামীম, মেহেদী হাসান ও মো: আব্দুল্লাহ। তারা আরো জানায়, দালাল জাবেদ আমাদেরকে কারাগারে থাকাকালে হুমকি প্রদান করেছে।

ইমন ভুইয়া মাহফুজ এর পিতা মো: আলীম বলেন, আমার ছেলে আমাদের মাধবতি বাজারে গিয়ে আর ঘরে ফেরেনি। পরে টেকনাফ থেকে ফোন করে টাকা পাঠানোর কথা বলে। এ কথা শুনে আমি দিশাহার বনে যাই।’ তিনি আরো বলেন, বিজিবি যেখানে মানবপাচারসহ যাবতীয় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার কথা সেখানে তাদের জড়িত থাকার কথা কোনভাবেই শুভনীয় নয়। ঘটনা তদন্ত করে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রহিম জানান, বিজিবির বিষয়টি তাদের নিজস্ব বিষয়। এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারছিনা। এছাড়া ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল ফরিদ হাসান বলেন, আজ বিকালে আদালতের নির্দেশনা পাওয়া গেছে। এটি পাবার পরপরই বিজিবির সদস্যদের ক্লোজড করা হয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ সহ জোর তদন্ত শুরু করা হয়েছে।’
অপরদিকে একই দিনে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে কক্সবাজারে মানব পাচারের ঘটনা হ্রাস পেয়েছে দাবি করে জানান, গত ২ মাসে জেলায় মানব পাচারের ৪৫ টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময়ে ২০৮ জন আসামির মধ্যে ৫৯ জনকে গ্রেপ্তার এবং অবৈধভাবে মালয়েশিয়াগামী ৩৩৭ জন ভিকটিমকে আটক করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত

  • বৌদ্ধ তারুণ্য সংগঠন- সম্যক এর ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
  • টেকনাফে নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
  • টেকনাফে পুলিশের অভিযানে ১৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার
  • কর্মক্ষেত্রে অনন্য কক্সবাজারের একমাত্র নারী ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন
  • টেকনাফে অর্ধডজন মামলার আসামি ডাকাত আবুল খায়েরসহ গ্রেপ্তার-২
  • ১৫ ঘন্টা পর ট্রলারসহ ৫৬ জেলেকে ছেড়ে দিয়েছে মিয়ানমারের নৌবাহিনী
  • চকরিয়ায় থানার সামনে সাংবাদিকের উপর হামলা
  • রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি হত্যা মামলার ৪ আসামী গ্রেফতার
  • বাংলাদেশ বৌদ্ধ যুব পরিষদ-ট্রাষ্ট পরিচালনা কমিটি গঠিত
  • উখিয়ায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার চুরি করতে গিয়ে একজনের মৃত্যু
  • উখিয়ায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার চুরি করতে গিয়ে একজনের মৃত্যু

    নিহতের জিহ্বা কেটে পালিয়েছে সহযোগীরাউখিয়ায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার চুরি করতে গিয়ে একজনের মৃত্যু

      পলাশ বড়ুয়া:: কক্সবাজারের উখিয়ায় ট্রান্সফর্মার চুরি করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু ...